Published: 7/27/2025
রুকইয়াহ (رقية) একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো ঝাঁড়ফুঁক, সম্মোহন ইত্যাদি। যদি রুকইয়াহতে শিরক ও কুফরি বাক্য বা পদ্ধতি থাকে তাহলে সেটা রুকইয়াহ শিরকিয়্যাহ বা কুফরিয়্যাহ; এটি নাজায়েজ ও হারাম। আর যেই রুকইয়াতে শিরক ও কুফরি কোনো বাক্য বা পদ্ধতি থাকে না বরং শরিয়াহসম্মতভাবে হয় সেটা হলো রুকইয়াহ শারইয়্যাহ; এটি জায়েজ। সাহাবীগ রা. এই ধরনের রুকইয়াহ করেছেন। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেছেন-
“রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহিহ মুসলিম: ৫৫৪৪)
পরিভাষায় রুকইয়াহ শারইয়্যাহ বলা হয়, কুরআন-হাদিস ও সালাফদের থেকে বর্ণিত নির্দিষ্ট দোয়া, আয়াত ও জিকির পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ ভরসা রেখে শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য ঝাড়ফুঁক করা। অর্থাৎ যেসব দোয়া ও পদ্ধতি যেমন, দ্বর্ব, ইস্তেফরাগ, ইসহাল রুকইয়াহর গোসল, প্রেশার প্রয়োগ, কালোজিরা, মধু, যায়তুন ইত্যাদি খাওয়া ও ব্যবহার করার মাধ্যমে এবং কোরআনের আয়াত ও বৈধ কোনো বাক্য পাঠ করে ঝাড়ফুঁক করাই হলো রুকইয়াহ।
🔻রুকইয়াহ কেন করা হয়?
সাধারণত ৩ ধরনের সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করা হয়ে থাকে:
১. শারীরিক অসুস্থতা–যেমন জ্বর, মাথাব্যথা, শারীরিক অস্থিরতা ইত্যাদি যে কোন সমস্যায় প্রয়োজনীয় ট্রিটমেন্টের পাশাপাশি রুকইয়াহ করা যায়। বিশেষ করে যদি ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসিসে নির্দিষ্ট কোনো সমস্যা পাওয়া না যায়, কিংবা দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়েও সমস্যা না কমে তাহলে রুকইয়াহ হতে পারে উত্তম বিকল্প। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ
অর্থ : আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত।
.
২. মানসিক ও আত্মিক সমস্যা–যেমন দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা, ভয়, দুঃস্বপ্ন, ওয়াসওয়াসা ইত্যাদি সমস্যার জন্য রুকইয়াহ কার্যকর।
৩. জাদুটোনা, বদনজর ও জিনের আছর ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য রুকইয়াহ একমাত্র বৈধ ও কার্যকর পদ্ধতি। তবে শারীরিক সমস্যা বা মানসিক অস্থিরতার পেছনে যদি জাদু, বদনজর বা জিনের প্রভাব থাকে, তবে এরজন্যও রুকইয়াহ হতে পারে উত্তম পদ্ধতি।
🔻রুকইয়াহ কীভাবে করা হয়?
রুকইয়াহ করার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। যদি কেউ রুকইয়াহ সম্পর্কিত জ্ঞান রাখেন তাহলে তিনি নিজেই নিজের সমস্যার জন্য "রুকইয়াহ" করতে পারেন। আর যদি এ বিষয়ে তার জ্ঞান না থাকে তাহলে একজন অভিজ্ঞ রাক্বীর কাছে গিয়ে রুকইয়াহ করবেন। যারা অন্যের জন্য রুকইয়াহ করেন তাদেরকে বলা হয় "রাক্বী"।
১. নিজের জন্য রুকইয়াহ (সেল্ফ রুকইয়াহ):
✔ সতর্কতা: প্রথমে বিশুদ্ধ নিয়ত করুন যে আপনি শুধু আল্লাহর কাছে আরোগ্য চাইছেন।
✔ উদ্দেশ্য: যে সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করছেন, সেটির জন্য বিশেষভাবে দোয়া করুন।
✔ পদ্ধতি: এরপর রুকইয়াহর নির্দিষ্ট আয়াত ও দোয়া পড়ে রুকইয়াহ করুন।
২. অন্যের জন্য রুকইয়াহ:
✔ রাক্বী (যিনি রুকইয়াহ করে দিবেন) রোগীকে পাশে বসিয়ে কুরআনের নির্দিষ্ট আয়াত ও দোয়া পড়ে রুকইয়াহ করবেন।
✔ পানির ওপর ফুঁ দিয়ে সেই পানি রোগীর শরীরে ছিটিয়ে দেবেন বা পান করাতে পারেন।
✔ রোগী পুরুষ বা মাহরাম মহিলা হলে হাত রেখে (বিশেষত শরীরের যে স্থানে সমস্যা, সেখানে বা মাথায় হাত রেখে) রুকইয়াহ করতে পারেন।
✔ এ ছাড়াও রাক্বী রোগীর অবস্থা অনুযায়ী জ্বীন-যাদুর প্রভাব দূর করার জন্য অভিজ্ঞতালব্ধ বিভিন্ন জায়েয পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন।
✔ রুকইয়াহ করার পর রাক্বী রুগীকে কিছু আমল দিয়ে থাকেন। সেগুলো বাড়িতে চালিয়ে যেতে হয়। এর মধ্যে থাকতে পারে: কুরআন তেলাওয়াত, বিভিন্ন দোয়া, মাসনুন আমল, রুকইয়াহর অডিও, বদনজর কিংবা বরই পাতার গোসল ইত্যাদি।
🔻রুকইয়াহর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য
১. রুকইয়াহ করতে কখনই রোগীর বাবা-মায়ের নাম, রোগীর ছবি ইত্যাদির প্রয়োজন হয় না। কিন্তু কবিরাজির ক্ষেত্রে এসব প্রয়োজন হয় অনেক ক্ষেত্রে।
২. রুকইয়াহতে কোনো প্রকার তাবিজ-কবচের ব্যবহার করা হয় না। এমনকি রুগীকেও কোনো ধরনের তাবিজ দেওয়া হয় না।
🔻রুকইয়াহতে যেসব কাজ করা হয় না
১. রুকইয়াহতে কোনো প্রকার হাজিরা দেখা, বাবা-মায়ের নাম দিয়ে সমস্যা বলে দেওয়া, জ্বীন চালান দেওয়া, কাউকে বান মারা ইত্যাদি কোনো কাজ করা হয় না।
২. বশীকরণ, ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়া ইত্যাদির জন্য কোনো আমল বা তদবির দেওয়া হয় না।
🔻কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
✔রুকইয়াহ একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভর করে করতে হবে।
✔কোনো শিরকযুক্ত দোয়া, তাবিজ বা ঝাড়ফুঁক করা যাবে না।
✔বিশ্বাস রাখতে হবে যে আরোগ্য শুধু আল্লাহই দিতে পারেন।
✔ সমস্যা বেশি হলে কিংবা নিজে রুকইয়াহ করতে না পারলে বিশ্বস্ত, দ্বীনদার ও অভিজ্ঞ একজন রাক্বীর কাছে গিয়ে রুকইয়াহ করতে পারেন।
🔻লক্ষণীয়
রুকইয়াহ কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী নিরাময়ের একটি বৈধ পদ্ধতি। এটি শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয়ে করা উচিত এবং এতে কোনো বিদআত বা শিরকযুক্ত পদ্ধতি গ্রহণ করা যাবে না। নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও বিশুদ্ধ নিয়ত রুকইয়াহকে আরও কার্যকর করে তোলে।
© All content (photos, videos and texts) of Hijama Support : Cupping & Ruqyah Center are copyrighted by Hijama Support : Cupping & Ruqyah Center. If anyone copies or partially modifies and posts it, legal action will be taken, Insha'Allah.
হাদিসের কিতাবগুলো মুসলিমদের জন্য হেদায়েত এবং অনুপ্রেরণার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এই কিতাবগুলো মহানবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম)-এর সীরাত(জীবনী) ও দিক-নির্দেশনার প্রতি অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।